জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপূর্ব নিসর্গ-বিল-চতরা। এটি বৃহত্তর পাবনা জেলা আটঘরিয়া উপজেলায় লক্ষীপুর ইউনিয়নের হাটুরিয়া বংকুরী মৌজাস্থ একটি প্রাকৃতিক জলাশয় যার সড়কপথে দূরত্ব পাবনা সদর হতে ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে।
বিল চতরার মোট আয়তন প্রায় ৪৮ হেক্টর, যা শুষ্ক মৌসুমে শুকিয়ে মাত্র ৪-৫ হেক্টরে পরিণত হয়। বর্ষাকালে এর গড় গভীরতা প্রায় ১৫ ফুট থাকলেও খরা মৌসুমে ৩-৪ ফুটে নেমে আসে। এটি বদ্ধ স্লুইচ গেটের মাধ্যমে যমুনা নদীর সাথে সংযুক্ত। এছাড়াও টাকীড়াড়ি বিল, গম বিল, গাব বিল, গারুলিয়া বিলসহ আরও বেশ কিছু বিল দ্বারা এটি বেষ্টিত যা বর্ষাকালে সংযুক্ত হয়ে বিশাল প্রাকৃতিক জলাশয়ে পরিণত হয়।
জীববৈচিত্র্যপূর্ণ চতরা বিলে দেশীয় প্রজাতীর বিভিন্ন মাছ যেমন- রুই, কাতলা, মৃগের, পুটি, টেংরা, টাকি, বাইম ইত্যাদি সহ এক সময়ের বিলুপ্ত প্রায় মাছ বাতাসি পর্যাপ্ত পরিমা ন পাওয়া যায়। অন্যদিকে বিলুপ্তপ্রায় মাছের তালিকায় রয়েছে পাবদা, সরপুটি ও শিলং।
চতরা বিলে জলজ উদ্ভিদের এক অপূর্ব সমাহার বিশেষভাবে লক্ষণীয়। এখানে বিভিন্ন প্রকার জলজ উদ্ভিদের মধ্যে রয়েছে কচুরীপানা, শাপলা, ঝাউগাছ, কাটা শেওলা, কলমীলতা, ইত্যাদি যা মাছের নিরাপদ আবাসস্থল ও খাদ্যের প্রধান উৎস্য হিসেবে কাজ করে।এছাড়াও রয়েছে অন্যান্য জলজ প্রাণী যেমন শামুক, কচ্ছপ, সাপ, ব্যাঙ ইত্যাদি যা জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
বিরটির চারপাশের মোট ৫টি গ্রামের ১৯১ জন সুফলভোগীদের সমন্বয়ে “বিল চতরা” স্থানীয় জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটি রয়েছে যারা প্রতিবছর বিল থেকে প্রচুর পরিমান মৎস্য সম্পদ আহরনের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।
এই বিলটির মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ, মৎষ্যজীবিদের ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে মৎস্য অধিদপ্তরের “অভ্যন্তরীন মুক্ত জলাশয়ের মৎস্য আবাসস্থল পুনরুদ্ধার” শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ২০০৭ সালে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সাথে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সমঝোতা স্মারকের ভিত্তিতে বিল চতরায় ২ হেক্টর এলাকায় ১টি স্থায়ী মৎস্য অভয়াশ্রম স্থাপন, বাঁধ নির্মাণ, কজ-ওয়ে নির্মাণ, নার্সারী পুকুর খনন, কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ ইত্যাদি কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এসব কার্যক্রম গ্রহণের মাধ্যমে পানির গভীরতা বাড়ায় ও মৎস্য সংরক্ষণের ফলে চতরা বিলে মাছের প্রাচুর্য ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস